ঢাকার মিরপুরের দুয়ারীপাড়ায় জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ৪৭৩টি প্লটসহ প্রায় ২৬ একর জমি ২৮ বছর আগে দখল করেছিলেন ঢাকা-১৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা। মিরপুর ১ নম্বরে ঢাকা চিড়িয়াখানার নামে বরাদ্দ হওয়া প্রায় দুই একর জমি দখল এবং মিরপুর ২ নম্বরে তুরাগ নদের অংশ ভরাট করে দুই শতাধিক বস্তিঘর গড়ে তোলারও অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।
ইলিয়াস মোল্লার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির জন্য তিনি অর্ধশত সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। বিভিন্ন বস্তি, মার্কেট, দোকান ও বাসস্ট্যান্ড থেকে এই ক্যাডার বাহিনী নিয়মিত চাঁদা তুলত।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ইলিয়াস মোল্লার আয়ের বড় একটি উৎস হলো দুয়ারীপাড়া। মিরপুর সাড়ে ১১–সংলগ্ন দুয়ারীপাড়ার ৪৭৩টি প্লট নিয়ে ওয়াক্ফ এস্টেট ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিরোধের সুযোগটি কাজে লাগান ইলিয়াস মোল্লা। জায়গাটি ১৯৮১ সালে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সরকারি কর্মচারীদের বরাদ্দ দেয়। কিন্তু ওই জমি ওয়াক্ফ এস্টেটের দাবি করে দখলে নেওয়া হয়, যার নেতৃত্বে ছিল ইলিয়াস মোল্লার পরিবার। ১৯৯৬ সাল থেকে ধীরে ধীরে এটি নিয়ন্ত্রণে নেন তিনি। জমি থেকে উচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে বছরে মোটা অঙ্কের চাঁদা নেওয়া হতো। এ ছাড়া এখানে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ দিয়ে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে প্রতি মাসে বিল বাবদ এবং ভাড়ার নামে টাকা তুলতেন। সরকারি তহবিলে এই টাকা জমা হতো না, ঢুকত ইলিয়াস মোল্লা ও তাঁর অনুসারীদের পকেটে। এসব প্লটের আয়তন পৌনে দুই, আড়াই ও তিন কাঠা।
দুয়ারীপাড়া কাঁচাবাজার সড়কের দুই ধারে গড়ে ওঠা কয়েক শ দোকানের নিয়ন্ত্রণও ইলিয়াস মোল্লার অনুসারীদের হাতে। তিন অনুসারী লতিফ, সুজন ও লুৎফরের নাম বলেছেন দোকানিরা।
দুয়ারীপাড়ায় এসব প্লটে বসবাসকারী একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্লটগুলো থেকে এখন বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদা তোলা হয়।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, দুয়ারীপাড়ায় জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সারি সারি এসব প্লটে দুই সহস্রাধিক আধা পাকা ও ছাপরা গড়ে উঠেছে। এসব স্থাপনায় বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের অবৈধ সংযোগ রয়েছে। একটি ঘরের ভাড়া দুই থেকে তিন হাজার টাকা।
দুয়ারীপাড়া কাঁচাবাজার সড়কের দুই ধারে গড়ে ওঠা কয়েক শ দোকানের নিয়ন্ত্রণও ইলিয়াস মোল্লার অনুসারীদের হাতে। তিন অনুসারী লতিফ, সুজন ও লুৎফরের নাম বলেছেন দোকানিরা।
জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৮ সালে দুয়ারীপাড়ায় এই সরকারি প্লট থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়। পরের বছর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ইলিয়াস মোল্লার মদদে তা আবার বেদখল হয়ে যায়। দখল পাকাপোক্ত করতে তারা একই বিষয়ে পাঁচ-ছয়বার মামলা করে। কিন্তু প্রতিবারই আদালত সরকারের পক্ষে রায় দেন।
জানতে চাইলে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ঢাকা বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার ইবনে শেখ প্রথম আলোকে বলেন, বেদখল হয়ে যাওয়া ৪৭৩টি প্লট উদ্ধার ও অবৈধ কাঁচাবাজার উচ্ছেদে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন