admin
২৫ নভেম্বর ২০২৪, ৯:১১ পূর্বাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

দ্বিতীয় বাণিজ্যযুদ্ধের জন্য চীন কতটা প্রস্তুত

২০১৮ সালের গ্রীষ্মে যখন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেইজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেন, তখন চীনের অর্থনীতি ছিল শক্তিশালী। এমনকি ধারণা করা হচ্ছিল, শিগগিরই চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে।

কিন্তু ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার কয়েক মাস আগে চীনের সেই অর্থনৈতিক শক্তি অনেকটাই ক্ষুণ্ন হয়েছে; সম্পত্তি খাতের সংকট, ঋণের চাপ ও মূল্যহ্রাসের মতো সমস্যার মোকাবিলায় লড়াই করছে চীন। এ কারণে আরেকটি বাণিজ্যযুদ্ধের জন্য তারা প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে না।

কিন্তু বাইরের পরিস্থিতি দেখে অনেক সময় মূল বিষয়টি বোঝা যায় না। বাস্তবতা হলো, নির্বাচিত-প্রেসিডেন্টের কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে চীনের নেতৃত্ব এখন আরও ভালোভাবে প্রস্তুত। ট্রাম্প তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রীত পণ্যের ওপর ৬০% শুল্ক আরোপের পথে হাঁটলে চীন বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করবে। যেমন বাণিজ্যের বহুমুখীকরণ, মার্কিন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে লক্ষ্যভিত্তিক প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা ও অভ্যন্তরীণ ভোগ চাঙা করা।

চীন অনেক দিন ধরেই এই প্রস্তুতি নিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এখন আর তাদের বাণিজ্য নেটওয়ার্কে আগের মতো গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে মন্তব্য করেছেন ট্রেড ওয়ার আটলান্টিক কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ ফেলো ডেক্সটার রবার্টস।

প্রথম বাণিজ্যযুদ্ধ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জমানায়ও অব্যাহত ছিল। অর্থাৎ, প্রায় ছয় বছর ধরে বেইজিং এবং চীনা কোম্পানিগুলো এই পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তাদের বাণিজ্য–নির্ভরতা অনেকাংশে কমেছে। চীনের বাণিজ্যিক পরিসংখ্যানের মাধ্যমে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং বেশ দ্রুতই তা ঘটছে।
২০২২ সালেও চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ছিল রেকর্ড পরিমাণ। তবে গত বছরে চীনকে পেছনে ফেলে মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির সবচেয়ে বড় উৎসে পরিণত হয়েছে। চীন ২০ বছর ধরে এই অবস্থান ধরে রেখেছে, কিন্তু গত বছরে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের রপ্তানি ২০ শতাংশ কমে ৪২৭ বিলিয়ন বা ৪২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার দাঁড়িয়েছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাথিউস এশিয়ার তথ্যানুসারে, গত বছর চীনের মোট রপ্তানির ৩০ শতাংশের মতো হয়েছে জি-৭–ভুক্ত ধনী দেশগুলোতে, ২০০০ সালে যা ছিল ৪৮ শতাংশ। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি কমলেও বৈশ্বিক রপ্তানি বাণিজ্যে চীনের হিস্যা বর্তমানে ১৪ শতাংশ, প্রথম দফায় ট্রাম্প শুল্ক আরোপের আগে যা ছিল ১৩ শতাংশ।
গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে চীনের সহকারী বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং শাওয়েন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাইরের ধাক্কা মোকাবিলা ও প্রতিরোধের সক্ষমতা আমাদের আছে।’

পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীন সম্ভবত বড় কিছু করবে না, যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ড বিক্রি (যেখানে চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা) অথবা মুদ্রা ইউয়ানের বড় ধরনের অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে এমনিতেই ইউয়ানের ১২ শতাংশ মূল্যহ্রাস হয়েছে।
এসব নাটকীয় পদক্ষেপে কাজ হবে না বলে মনে করেন ম্যাথিউস এশিয়ার চীনবিষয়ক কৌশলবিদ অ্যান্ডি রথম্যান। তিনি আরও বলেন, চীন সাধারণত সরাসরি এভাবে প্রতিশোধ নেয় না।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুল্কের ক্ষেত্রে ইটের বদলে পাটকেল মারার নীতি আশা করা ঠিক হবে না। ইতিমধ্যে চীনে কর্মরত বিদেশি কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। শুল্কের জবাবে তারা মার্কিন কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ বাড়াতে পারে, এমন হতে পারে যে তারা কিছু কোম্পানিকে লক্ষ্য করতে পারে, যাদের তারা চীনছাড়া করবে।

সেপ্টেম্বরে বেইজিং জানিয়েছিল, ফ্যাশন খুচরা বিক্রেতা পিভিএইচ করপোরেশনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। অভিযোগ, তারা শিনজিয়াং অঞ্চল থেকে সুতা নিতে চায়নি। ওই অঞ্চলে চীন সরকার বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ। এর জেরে শেষমেশ চীনে ব্যবসা করা বড় এই মার্কিন কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।

গত বছর চীনা পুলিশ সাংহাইয়ে মার্কিন ব্যবস্থাপনা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বেইন অ্যান্ড কোম্পানির কার্যালয়ে অভিযান চালায়। এই ঘটনায় মার্কিন ব্যবসায়ী মহলে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। সেই ঘটনার পর রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়, নিরাপত্তা বাহিনী আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যাপভিশনের শাংহাই ও নিউইয়র্ক কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলেন, চীনের পক্ষে মার্কিন ট্রেজারি নোট বিক্রি করার চেয়ে মার্কিন প্রতিষ্ঠান বা কৃষি শিল্পগুলোর ওপর প্রতিশোধ নেওয়া অধিক বাস্তবসম্মত। কারণ, এ ধরনের বিলের ক্রেতার অভাব নেই; এগুলো বিক্রি করলে বেইজিংয়ের স্বার্থহানি হতে পারে। ট্রাম্প নতুন শুল্ক আরোপ করলে চীন ইউয়ানের দরপতন ঘটিয়ে রপ্তানি বৃদ্ধির চেষ্টা করতে পারে এমন সম্ভাবনা প্রসঙ্গে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এটা তাঁদের পরিকল্পনায় নেই।

বিশ্লেষকেরা বলেন, ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে হঠাৎ ইউয়ানের অবমূল্যায়ন করা হলে শেয়ারবাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি চীন সরকার জানিয়ে দিয়েছে, তারা শেয়ারবাজারে আস্থা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে, যেন এই বাজার দেশীয় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হতে পারে।
এ ছাড়া চীন সরকার ইউয়ানকে মার্কিন ডলারের নির্ভরযোগ্য বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। বিশেষ করে ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার সম্পদ স্থগিত করার কারণে যেসব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই সব দেশের কাছে ইউয়ানকে গ্রহণযোগ্য করতে চায় তারা।

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের মামলা

আরও ৪০ জন যুক্ত, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য এখন ১৪৭

ইজতেমা ময়দানে দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত শতাধিক

তজুমদ্দিনে বিএনপি’র দু’পক্ষের মারামারির ঘটনায় আহত ১১ জন।

শেরপুরে আকতার আলী হত‍্যা মামলার আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবী নিহতের স্বজনদের

নিতপুর ইউনিয়ানের হবীর মোড়ে ড্রীম ক্যাডেট প্রাইভেট সেন্টারের আয়োজনে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র/ ছাত্রীদের বিদায় অনুষ্ঠান ও মা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

পোরশায় ৬ ইউনিয়নে বিট ও কমিউিনিটি পুলিশিং সমাবেশ অনুষ্ঠিত

সৌদিআরব বাংলাদেশ রিপোর্টার্স এশোসিশন অব ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ৭ সদস্যর আহবায়ক কমিটি ঘোষনা,

কেউ দাসখত দেয়নি যে জামদানি এভাবে পরা যাবে না: জয়া

সৌদি আরবে রেকর্ড ৩০৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

১০

শীতে কাঁপছে ফুলবাড়ীর জনপদ

১১

আওয়ামী লীগ নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে, আমার কাছে তথ্য আছে: কর্নেল অলি

১২

অবৈধ পলাতক বাংলাদেশি কর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিলো সৌদি সরকার।বিডি সংবাদ ৭১

১৩

আলেপ্পো থেকে হামার পথে বিদ্রোহীরা, রুশ বিমান হামলা অব্যাহত

১৪

টি-টোয়েন্টি ম্যাচ বল করলেন ১১ জনই!

১৫

দীপু-ইনু-মেনন-পলক নতুন মামলায় কারাগারে

১৬

‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণার রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন

১৭

ভারতের সাম্প্রদায়িক উসকানি নিয়ে যা বললেন মিজানুর রহমান আজহারী

১৮

শেখ জাফর আহমদ এর মৃত্যুতে শোকসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন,সৌদি বাংলাদেশ বিজনেস এন্ড ইনভেস্টরস ফোরাম

১৯

ভোররাতে বাদশার পানশালায় বোমা বিস্ফোরণ !

২০