জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্সের চিকিৎসকের ওপর রোগীর পরিবারের সদস্যদের হামলা ও সেই ঘটনার ছবি ও ভিডিও ধারণের জন্য হামলাকারী ও স্থানীয় সাংবাদিকদের আসামি করে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল হক একটি মামলা দায়ের করেছেন। শুধু তাই নয়, স্থানীয় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, কর্মচারীদের নিয়ে তিনি বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা করছেন। সাংবাদিকদের বিতাড়িত করার ঘোষণাসহ তিনি নানা আপত্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার এসব বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভাইরাল হয়েছে।
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৮ অক্টোবর রজব আলী নামে এক রিকশাচালক অসুস্থ হয়ে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। ঐদিন সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রজব আলী মারা যান। এ ঘটনায় মৃতের আত্মীয়-স্বজন কর্তব্যরত ডাক্তার আসমা লাবনীর দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ করে তার ওপর হামলা চালান। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকরা ঐ ঘটনার ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। পরে ২৯ অক্টোবর মৃত রোগীর পরিবারের কয়েক জন সদস্যের বিরুদ্ধে বকশীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। হামলার ছবি ও ভিডিও ধারণ করায় ঐ মামলায় দৈনিক বসুন্ধরার সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম, মুভি বাংলার সাংবাদিক এ কে এম নূর আলম নয়ন ও দৈনিক বাংলাদেশ সমাচারের সাংবাদিক মারুফ হাসানকে আসামি করা হয়।
জানা গেছে, হামলার সময় আক্রান্ত চিকিৎসককে সাহায্য না করে সাংবাদিকরা ছবি ও ভিডিও ধারণে ব্যস্ত থাকায় তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল হক। মামলা দায়েরে করার পর সাংবাদিকদের গাছের সঙ্গে বেঁধে লাল থেরাপি দেওয়ার হুমকি তিনি। প্রকাশ্যে মাইকে তিনি ঐ ঘোষণা দেন।
স্থানীয়রা জানান, সরকারি কর্মকর্তা হয়েও চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রেখে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তিন দিন বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তিনি। কর্মকর্তা হিসেবে তার অধীনস্থ কর্মচারীদেরও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিছিলে যেতে বাধ্য করেন। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিছিল বের করে বকশীগঞ্জ পৌর শহর, উপজেলা ক্যাম্পাস ও বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে তিনি সাংবাদিকদের বকশীগঞ্জ থেকে বিতাড়িত করারও ঘোষণা দেন।
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যান। আপনারা সাংবাদিকতা করতে পারবেন না।’
এ ঘটনায় বকশীগঞ্জ উপজেলাসহ জেলার সাংবাদিকরা বিব্রত বোধ করছে। বকশীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দৈনিক কালের কণ্ঠের সাংবাদিক আব্দুল লতিফ লায়ন বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিভিন্ন স্থানে মাইকে যে সকল মানাহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন, তার নিন্দা জানাই। তিনি যা করছেন অতিরঞ্জিত করছেন।’ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এ ব্যাপারে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ আজিজুল হক সাংবাদিকদের জানান, আমার যা বলার আমি প্রকাশ্যেই বলেছি। ঐ বক্তব্য নিয়ে ভিন্ন কিছু বলার নেই। আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।
মন্তব্য করুন