রতকে যা দিয়েছি সেটি তারা সারা জীবন মনে রাখবে’—উক্তিটি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে যিনি পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন ভারতেই। বর্তমানে তিনি ভারতের আতিথিয়েতায় দেশটিতে অবস্থান করছেন। সেই স্বৈরশাসকের উক্তির প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক অঙ্গন, প্রশাসনসহ জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে—ভারতকে কী দিয়েছেন শেখ হাসিনা?
এনটিভির অনুসন্ধান বলছে, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে অন্তত ২০টি চুক্তি ও ৬৬টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। অন্তবর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দাবি, এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের অধিকাংশতেই উপেক্ষিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বার্থ। ফলে চুক্তিগুলো পর্যালোচনায় উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন সরকারের একাধিক উপদেষ্টা।
ভারত ট্রানজিট পেলেও ‘সিঙ্গাপুরের মতো’ হয়নি বাংলাদেশ
২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর প্রতিবেশি দেশ ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার বিষয়টি জোরেশোরে আলোচনায় আসে। সে সময়ের স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী ও আমলাদের মুখেমুখে ছিল সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, দুবাইয়ের মতো হয়ে উঠছে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো। অনেকে দেশটিকে খুব শিগগির ইউরোপ-আমেরিকার দেশের সঙ্গেও তুলনা হবে বলে প্রচারণা শুরু করেন। ‘ভারতকে ট্রানজিট দিলে’ এই সম্ভাবনার দ্বারে খুব অল্প সময়েই পৌঁছাবে বলে আলোচনা হচ্ছিল। যদিওর ওই সময় প্রস্তাবিত ট্রানজিটের বিপক্ষে বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতের মানুষ তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলে। তাতে ভ্রুক্ষেপ না করে নিজ সিদ্ধান্তের পথে হেঁটে যায় শেখ হাসিনার সরকার।
নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশ প্রথম নৌ-ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষর করে ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে। এর আগে নৌ-মন্ত্রণালয় চুক্তির খসড়া পর্যালোচনা করে মতামত চেয়ে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। আইন মন্ত্রণালয় নেতিবাচক মতামত দিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণসহ তিন দফায় চুক্তির খসড়াটি নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগ সূত্র বলছে, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার বিনিময়ে কোনো ধরনের শূল্ক বা ট্যারিফ আরোপের বিষয়টি চুক্তির খসড়ায় উল্লেখ করেনি। শেষ পর্যন্ত চতুর্থ দফায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় আইন মন্ত্রণালয় ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার চুক্তির পক্ষে মতামত দিতে বাধ্য হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের অভিমতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনার কথাটি উল্লেখ করে বলা হয়, ‘বিভিন্ন দেশের ট্রানজিট চুক্তির খসড়া পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিনা শুল্কে ট্রানজিট দেওয়ার উদাহরণ (রেফারেন্স) নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ নির্দেশনা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাননীয় অর্থ উপদেষ্টার টেলিফোনে দেওয়া পরামর্শের আলোকে ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তির খসড়া পর্যালোচনা করে অভিমত দেওয়া গেল। তারপরও চুক্তিটি সম্পাদনের আগে এ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি ও ট্রিটিসমূহ গভীরভাবে পর্যালোচনা ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে এ সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ অনুসরণ করার অনুরোধ জানানো হলো।’
মন্তব্য করুন