বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে আমেরিকা নিমন্ত্রণ করে এনেছে। ১১ দিনের এই সফরে তিনি কানাডায়ও যাবেন। যে সময় কানাডা এবং ভারতের সম্পর্কে উত্তেজনার গতিতে হাওয়া লেগেছে।
ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য রাজ্য পাঞ্জাব স্বাধীন রাষ্ট্র করার আন্দোলনের একজন স্বনামধন্য নেতাকে কানাডায় হত্যা করার পর এই দুই দেশের মধ্যে ইতিপূর্বে বিতর্ক ছড়িয়েছিল। কানাডা তাদের নাগরিক হত্যায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইংকে (র) দায়ি করেছে। ইন্দো-প্যাসিফিকে পরাশক্তি আমেরিকার শক্তিধর অবস্থান নেয়ার স্ট্রাটেজিক সিদ্ধান্তে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ রাশিয়া মনিটর করা সহজতর হবে।
ব্রিটেনের প্রত্যক্ষ উপনিবেশ ভারতবর্ষকে দুভাগে বিভক্ত করে সম্পর্কের নতুন রূপান্তর ঘটানোর সময় থেকে ভারত তৎকালীন সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নেয়। পাকিস্তান চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক গড়ে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। পরবর্তীতে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ইউনিয়নের পতনের প্রক্রিয়ায় অনেক স্বাধীন রাষ্ট্রের উত্থান হবার ফলে সমাজতান্ত্রিক আদর্শিক ইউনিয়নের কার্যকারিতা গুরুত্ব হারায় ব্যাপক হারে। রাশিয়া তাই পরাশক্তির মর্যাদাশূন্য এক দারিদ্র পীড়িত রাষ্ট্রের পরিচয়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিনের লেনদেন এবং কৌশলগত বিবেচনায় ভারত রাশিয়ার সাথে মিত্রতা অব্যাহত রেখেছে ঠিকই, কিন্তু প্রকাশ্যে আমেরিকার মিত্র পাকিস্তানের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে শরণাপন্ন হয় আমেরিকার দুয়ারে।
একক এই পরাশক্তির আস্থা লাভের লক্ষে তলে তলে ইসরাইল বলয়ের মধ্যস্থতা কাজে লাগায় ব্যাপক ভিত্তিতে। এতে ভারতের সুবিধা প্রাপ্তি প্রচুর বৃদ্ধি পায় আমেরিকার সুনজর পেতে। এসময় ভারত একই সময়ে আমেরিকার কর্পোরেট গ্রুপগুলোর মধ্যে সম্পর্কে জড়ায় এবং নিজদেশে বেড়ে ওঠা কর্পোরেটগুলোর মাধ্যমে ভারতীয় রাজনৈতিক বলয়ে ফায়দা নেয়ার পথ অগ্রসর করে।
সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ইউনিয়নের অভ্যন্তরে কম্যুনিস্ট পার্টি যেভাবে পুঁজিবাদী ধারার বিরোধিতার দোহাই দিয়ে জাতিগত ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ বৃদ্ধি করে। নিষ্ঠুর দমনের তাণ্ডব চালিয়ে স্বৈরাচারী দুঃশাসন অব্যাহত রাখায় বঞ্চিত ও বিক্ষুব্ধ জনতা কমিউনিস্ট শাসন নীতি উপড়ে ফেলে দেয়। ভারতেও পাঞ্জাব, কাশ্মীর, সিকিম, উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্য, হায়দারাবাদ অনেক অঞ্চলসহ জাতি গোষ্ঠীর ক্ষোভ ধূমায়িত হয়ে আসছে ভারতে। প্রতিবেশী বাংলাদেশকে নিজেদের রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত করার অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিরক্ষা পলিসি ভারতের।
বাংলাদেশ ভারতের প্রতিরক্ষা বিষয়ক কৌশলগত সামরিক-রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক আধিপত্য বজায় রাখার নেটওয়ার্কসহ নিজেদের সৈন্যশক্তি নিয়ে এবছরের পাঁচ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ গুটিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশ ত্যাগে বাধ্য করতে বাংলাদেশকে সহায়তা দেয় পাকিস্তান ও ভারত। আমেরিকা নিজের স্বার্থগত লক্ষের সামনে ভারতের বিজেপি সরকারের ব্যর্থ প্রতিরক্ষার খেসারত দেবার জন্যে নিজের দায়িত্ব স্বীকার করে নেয়।
বাংলাদেশি প্রতিক্রিয়ার পথে ভারতের ক্ষমতাসীন মোদী সরকারের নীতিগত পরাজয়ে ন্যায়ের পক্ষে তার বিশ্ব মুরুব্বীর মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখে। মিত্রদেশ ভারতের পক্ষে জড়ানো থেকে বিরত থাকে। ভারত সরকার এবং তাদের প্রতিরক্ষা বিষয়ক নিয়ন্ত্রকদেরকে সতর্ক করে আসছে। বরঞ্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার পথে সহায়তা দিয়েছে।
আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তার বিবেচনায় আমেরিকার এই ভূমিকার প্রশংসা করেছে অঞ্চলের সব দেশ ও শক্তি। ভারতও আমেরিকার অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখেনা।
প্রতিরক্ষা এবং কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কাছে বাংলাদেশের বিষয়ে আমেরিকার নয়া স্ট্র্যাটেজিক অবস্থানের গতি প্রকৃতি অগ্রাধিকারের কাতারে বিবেচিত। পাঁচ নভেম্বর আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন। যাতে ভবিষ্যৎ পথের আলামত উঠবে ফুটে। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এই সময়েই আমেরিকার নিমন্ত্রণ এবং উষ্ণ হ্যান্ডশেক বাংলাদেশের গুরুত্বকে নিকট-অতীতের সম্পূর্ণ বিপরীতে তুলে ধরছে এই বিশ্ব পরাশক্তি। তারই হাত ধরে সমৃদ্ধি ও মর্যাদার উচ্চ শিখরেই প্রত্যয় দীপ্ত দৃঢ়তায় ছুটে চলেছে বাংলাদেশ।
মন্তব্য করুন