সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষ কৃষিশ্রমিক। বিশেষ করে মাঠে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কাজ না পেলে পোহাতে হয় সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশা। জাতিগতভাবে কঠোর পরিশ্রমী তারা। কিন্তু ‘অতি দরিদ্র, দিন আনি-দিন খাই’ অবস্থা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সুশীল কুমার মাহাতো বলেন, আদিবাসীরা কুটিরশিল্পের কাজ করতেন। কিন্তু উন্নত প্রযুক্তির শিল্পপণ্যের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। কৃষিশ্রমনির্ভর জীবন কখনও সুখের হতে পারেনা। মাঠে সব সময় কাজ থাকে না। সমতলের নৃ-গোষ্ঠীরা আরও প্রান্তিক হয়ে পড়ছেন।
শুক্রবার দেখা যায়, তালম ইউনিয়নের পাড়িল বড়ই চড়া মাঠে একদল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষিশ্রমিক ধান কাটছেন। তাদের বাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যূষিত গুড়পিপুল গ্রামে। কৃষিশ্রমিক সঞ্জিত ওরাওঁ, হৃদয় ওরাওঁ, বিরেন ওরাওঁ, তরনি ওরাওঁ, প্রতিমা ওরাওঁ, ফুলুদা ওরাওঁ, সাথী ওরাওঁ ও জোছনা ওরাওঁ দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, মাঠে কাজ পেলে বেশ খুশি থাকেন। পরিবারের তিনবেলার খাওয়ার নিশ্চিত হয়। নয়তো মহাজনের চড়া সুদের ঋণে, দোকানের বাকি ও ধার-দেনাতে জড়িয়ে পড়েন। অনেকে বিন্যার ফুল, খেজুর পাতা ও তালপাতার ঝাটা, সাপটা, পাটি বুনে বিক্রি করে কোনোরকমে সংসার চালানোর চেষ্টা করেন।
তাড়াশ উপজেলা আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি বিরেন্দ্র নাথ ওরাওঁ বলেন, সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রায় ২৬ হাজার আদিবাসী মানুষের বসবাস রয়েছে। তাড়াশেই বেশি, প্রায় সবাই ভূমিহীন। বংশ পরম্পরায় আদিবাসী নারী-পুরুষ কুটিরশিল্পের জিনিস তৈরি করতে পারদর্শী। মূলধন হিসেবে সুদমুক্ত ঋণ পেলে কুটির শিল্পের পেশায় ফিরতেন অনেকে।
সুশীল কুমার মাহাতো আরো বলেন, পাহাড়ের আদিবাসীদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় রয়েছে। জাতীয় বাজেটে তাদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। সমতলে বসবাসরত আদিবাসী মানুষের সংখ্যা পাহাড়ী আদিবাসীদের চেয়ে দ্বিগুণের বেশী। কিন্তু তাদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় নাই। কিছু অর্থ থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়। সামন্য অর্থে সমতলের আদিবাসীদের জীবনমানের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা বলেন, সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বৃত্তি চালু রয়েছে। শিক্ষা উপকরণ ও সাইকেল পাচ্ছে। আয়বর্ধক কর্মসূচির আওতায় গবাদি পশু দেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন